সাত আসরে টানা চতুর্থ শিরোপা সাউথ জোনের
1 min readওপেনার এনামুল হক বিজয় এবং দলপতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক এর দারুন পারফরমেন্সে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) শেষ রাউন্ডে জয় তুলে নিয়ে শিরোপা জিতলো সাউথ জোন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ১২ উইকেট নেওয়া রাজ্জাক। নর্থ জোনকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে তারা।
ষষ্ঠ রাউন্ডের এই ম্যাচে সাউথ জোনের অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক বল হাতে আরেকবার ম্যাজিক দেখিয়েছেন। আর ব্যাট হাতে ধুঁকতে থাকা আরিফুল হক নর্থ জোনের হয়ে করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৯৮ রান। ২ রানের জন্য প্রথমশ্রেণির ম্যাচে নবম সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন আরিফুল। আর ক্যারিয়ারে ৩৭তম বারের মতো ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন রাজ্জাক। এই ইনিংসে নিয়েছেন সাতটি উইকেট। এখানেই ব্যক্তিগত কীর্তি শেষ নয়। ব্যাটিংয়ে নেমে নর্থ জোনের ওপেনার মিজানুর রহমান ২৯ আর জুনায়েদ সিদ্দিকী করেন ৪৪ রান। তিন নম্বরে নামা ফরহাদ হোসেন করেন ২৪ রান। মাঝে নাঈম ইসলাম ৫ আর দলপতি জহুরুল ইসলাম ৩ রানে বিদায় নেন।
ছয় নম্বরে নেমে আরিফুল করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৯৮ রান। তার ১৫১ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর ৩টি ছক্কার মার। মাত্রই বিসিএলের আসরে নেমেছেন আরিফুল। এর আগে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন জাতীয় দলের জার্সিতে। গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডেতে আরিফুলের ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ৪১* আর ৩৮ রান করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ও ৫ রান করে বিদায় নিয়েছিলেন। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাভারে প্রস্তুতি ম্যাচে ২১ রান করেন। উইন্ডিজদের বিপক্ষে ওয়ানডে কিংবা টেস্টের স্কোয়াডে জায়গা হারিয়ে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে ফিরেছিলেন আরিফুল। তিন ম্যাচের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। প্রথম ম্যাচে ১৭ আর দ্বিতীয় ম্যাচে ০ রানে ফিরেছিলেন। বিসিএলে নেমেই খেললেন ৯৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
আরিফুলের দিনে উইকেটরক্ষক ধীমান ঘোষ ১২ এবং জিয়াউর রহমান ৬৯ রান করেন। সানজামুল ইসলাম, সাকলাইন সজীব এবং এবাদত হোসেনের ব্যাট থেকে কোনো রানই আসেনি। সাউথ জোনের দলপতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ২৯.৪ ওভারে ৬৯ রান খরচায় তুলে নেন সাতটি উইকেট। শফিউল ইসলাম, মেহেদি হাসান এবং নাহিদুল ইসলাম একটি করে উইকেট তুলে নেন।
ব্যাটিংয়ে নেমে সাউথ জোনের ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস ব্যক্তিগত ১ রানে সানজামুলের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন। আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয় ইনিংস সর্বোচ্চ ১৮০ রান করেন। প্রথমশ্রেণিতে এটি বিজয়ের ১৭তম সেঞ্চুরি। ফজলে মাহমুদ ৯, রকিবুল হাসান ৯ রানে বিদায় নেন। আল আমিন প্রথমশ্রেণির ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি করে ১২৮ রান করেন। মেহেদি হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৮৪ রান। ২৬ রানে বিদায় নেন নাহিদুল ইসলাম। এছাড়া, মনির হোসেন ৩৩, দলপতি রাজ্জাক অপরাজিত ৩৫ আর তুষার ইমরান ১৪ রান করেন।
নর্থ জোনের স্পিনার সানজামুল ইসলাম ৬টি উইকেট পান। দুটি উইকেট পান পেসার এবাদত হোসেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকলাইন সজীব এবং আরিফুল হক।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে নর্থ জোনের ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দীকি ৭৭ রান করেন। হার না মানা ৭৭ রান আসে জিয়াউর রহমানের ব্যাট থেকে। নাঈম ইসলাম করেন ৬৭ রান। বল হাতে আবারো জ্বলে উঠেন রাজ্জাক। ৩২.২ ওভারে ৭৫ রান দিয়ে তুলে নেন আরও ৫টি উইকেট। এক ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন তিনি। ৩৩ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে সাউথ জোনের ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস ব্যক্তিগত ৭ রানে বিদায় নেন। এনামুল বিজয় ২০ আর ফজলে মাহমুদ ৮ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
ছয় রাউন্ড শেষে সাউথ জোন সর্বোচ্চ ৩১.৮৮ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার স্বাদ পেলো। ২৯.১৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ইস্ট জোন। ২৩.৩৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে থেকে এই আসর শেষ হলো সেন্ট্রাল জোনের। আর টেবিলের তলানিতে থেকে ১৮.৬১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ হয়েছে নর্থ জোন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় নর্থ জোন এবং সাউথ জোন। আগে ব্যাটিংয়ে নামা নর্থ জোন সবকটি উইকেট হারিয়ে তোলে ২৯৩ রান। জবাবে, ব্যাটিংয়ে নেমে সাউথ জোন সবকটি উইকেট হারিয়ে তোলে ৫৪১ রান। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে নর্থ জোন করে ২৮০ রান। তাতে আবদুর রাজ্জাকের সাউথ জোনের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৩৩। শাহরিয়ার নাফিসের উইকেট হারালেও ৯ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে শিরোপা জিতলো সাউথ জোন।
Facebook Comments