লিভারপুলকে কাঁদিয়ে রিয়ালের হ্যাটট্রিক শিরোপা
1 min readউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন কোচ জিনেদিন জিদানও। রিয়ালের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা তার টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পঞ্চম। আর স্প্যানিশ ক্লাবটির ইতিহাসে ত্রয়োদশ শিরোপা।
শনিবার রাতের ফাইনালে লিভারপুলের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মোহাম্মদ সালাহকে ঘিরে। তার সঙ্গে স্বপ্নের সারথি হিসেবে ছিলেন রবার্তো ফিরমিনো ও সাদিও মানে। এই তিন তারকায় ভর করেই ১১ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এসেছিল লিভারপুল। রিয়ালের বিপক্ষে এই তিন তারকায় শুরু থেকেই উড়ছিল অলরেডরা। দারুণ দারুণ সব আক্রমণ করে রিয়ালের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছিল। কিন্তু কে জানত এমন দুর্যোগ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!
ম্যাচের ২৯ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহকে কড়া ট্যাকেল করেন রিয়ালের অধিনায়ক সার্জিও রামোস। সালাহর বাম হাত জড়িয়ে ধরে রামোস বেকায়দায় পড়ে যান মাটিতে। সালাহ আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। ব্যথায় কুকড়ে উঠে কাঁদতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাকে মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হয় ইনজুরি নিয়ে। এর ৫ মিনিট পর রবার্টসনের ট্যাকেলে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন রিয়ালের দানি কারবাহালও। ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়া, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ আর সুযোগ মিসের মহড়ার মধ্য দিয়ে প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।
বিরতির পর ফিরে এসেই লিভারপুলের গোলরক্ষক লোরিস কারিয়াসের বোকামির কারণে গোলের দেখা পেয়ে যান রিয়ালের করিম বেনজেমা। এ সময় বল ধরে ডি বক্সের ডান পাশে থাকা এক সতীর্থকে বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কারিয়াস। কিন্তু বল ছুড়ে মারার সময় বেনজেমা পা বাড়িয়ে দেন। বল তার পায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। লিড নেয় রিয়াল (১-০)। তবে এই লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৫ মিনিট পরেই সাদিও মানে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। এ সময় কর্নার কিক থেকে আসা বলে হেড নেন লোভরেন। তার হেড থেকে উড়ে গোলপোস্টের দিকে যাওয়া বলে আলতো করে পায়ের ছোঁয়া লাগিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন সাদিও মানে (১-১)।
এর পরের গল্পটুকু শুধুই গ্যারেথ বেলের। ৬১ মিনিটে ইসকোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ওয়েলস তারকা বেল। তিনি মাঠে আসলেন, খেললেন আর শিরোপা জয় করলেন। ৬১ মিনিটে মাঠে নেমে ৬৪ মিনিটেই অবিশ্বাস্য এক গোল করেন। এ সময় মার্সেলো তাকে ডি বক্সের ডান প্রান্ত থেকে উঁচু করে ডি বক্সের মধ্যে বেলকে বল বাড়িয়ে দেন। আনমার্ক বেল উঁচু হয়ে আসা বলে বাইকেল কিক নেন। গোলরক্ষকের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে দিয়ে বল গিয়ে জালে আশ্রয় নেয়। ৮৩ মিনিটে আরো একটি দর্শনীয় গোল করেন তিনি। ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া লম্বা পাসের বল লিভারপুলের গোলরক্ষক কারিয়াস পাঞ্চ না করে ধরার চেষ্টা করেন। বল তার গ্লাভস ফসকে জালে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল।
শিরোপা জয়ের খুশিতে রিয়ালের সমর্থক ও খেলোয়াড়রা উল্লাস করছিল, তখন কেঁদে-কুটে একাকার হচ্ছিল লিভারপুলের খেলোয়াড়রা। লিভারপুলের সমর্থকদের গ্যালাতি তখন শ্মশানের নীরবতা। চোখে লোনা পানির জোয়ার। এ কান্না ১৩ বছর পর শিরোপা জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শোকের। এ কান্না মোহাম্মদ সালাহ বিহীন প্রত্যাশিত খেলাটা খেলতে না পারার। গোলরক্ষক কারিয়াসের বোকামি মেনে নিতে না পারার কষ্টের।
Facebook Comments